সবার সংবাদ ডেস্ক:
মেহেরপুর সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামে আরজিনা খাতুন নামের এক ভূমিহীন পরিবারকে সরকারি খাস জমি থেকে উচ্ছেদ করে ওই জমি দখল নিতে দফায় দফায় বিভিন্ন পাইতারা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মুসা ও তার ছেলে শান্তর বিরুদ্ধে।
পরিবারটিকে উচ্ছেদ করতে গত ১৯ মার্চ অসহায় পরিবারটির একমাত্র আয়ের উৎস ঘরের সাথে থাকা ছোট্ট একটি মুদি দোকানে তালা লাগিয়ে দেওয়াসহ লোকজন ভাড়া করে রাতারাতি দোকানটি সরিয়ে দিয়েছে অভিযুক্তরা। জানা গেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য মিলনের উপস্থিতিতে শান্ত তার দলবল নিয়ে আরজিনার ছোট্ট কাঠের দোকানে তালা লাগিয়ে দোকানটি সেখান থেকে তুলে অন্যত্র সরিয়ে দেয় এবং দোকানের জায়গায় ইট ফেলে রাখা হয়। সরেজমিন গিয়ে দোকানটি অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া এবং দোকানটির স্থানে ইট রাখার অভিযোগের প্রমাণ মেলে। এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আরজিনা খাতুন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, আরজিনা খাতুনের নানী দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ ফতেপুর প্রধান সড়কে সরকারি জায়গায় বসবাস করতেন। পরিবারের কেউ বেঁচে না থাকায় বর্তমানে আরজিনা তার স্বামী ও এক কন্যা সন্তান নিয়ে ওই জায়গাতে দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ বসবাস করছেন। পাশাপাশি একটি মুদিখানার দোকান দিয়ে কোনভাবে জীবিকা নির্বাহ করে।
আরজিনার বসবাস করা জমির পিছনে কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির জমি আছে। সেই জমির পজিশন দখল করতে আরজিনাকে ওই সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ করার পায়তার শুরু করে কুদ্দুস, মুসা, শান্ত ও তার লোকজন। জমি নিজের দাবী করে কুদ্দুস ও তার লোকজন জমি ছাড়তে আরজিনাকে প্রতিনিয়ত মৃত্যু ও দোকান ভাংচুরের হুমকি দিয়ে আসছিল। যার কারণে ২৩ সালের ১৫ আগস্ট ওই জমির দখল নিতে আরজিনা ও তার স্বামী মানিকের উপর হামলা করে রক্তাত্ব জখম করেন অভিযুক্তরা।
আরও জানা গেছে, ওই জমিটি কুদ্দুস তার ওয়ারিশ ব্যতীত মৌখিক ভাবে নেয়া পালিত সন্তান শান্তকে লিখে দিয়েছেন। যদিও শান্ত স্থানীয় মুছা কলিমের ছেলে। এছাড়াও জমি নিজের দাবী করে আরজিনা ও তার স্বামী মানিকের নামে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারায় পিটিশন-৫৪০/২০২২ নং মামলা দায়ের করেন কুদ্দুস। উক্ত মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনে বিবাদীর কোনরুপ স্বত্ব বা দখল না থাকায় বিজ্ঞ বিচারক গত ২৫/০৯/২০২৩ তারিখের পিটিশনটি নথিজাত করে।
এদিকে ওই জমির আরেক ওয়ারিশ কুদ্দুসের ভাই সেলিম তার ভাগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় উক্ত জমির দলিল বাতিল সহ বেশ কয়টি মামলা দায়ের করেন। যা আদালতে এখনো চলমান। সেলিম বলেন এটা আমার বাবার জমি এই জমি নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে, তবুও তারা জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এই পরিবারটিকে বারবার উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
গত ১৯ শে মার্চ এই জমির বিষয়ে মিমাংসার জন্য বসলে আরজিনাকে ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ঐ জমি ছেড়ে দেয়া এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা উঠিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেন ইউপি সদস্য মিলন। মিমাংসায় বসবাসের একমাত্র জায়গা আরজিনা না ছাড়তে চাইলে ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেম্বার মিলনের উপস্থিতিতে শান্ত দলবল নিয়ে আরজিনার দোকানে তালা লাগিয়ে দোকানটি সেখান থেকে তুলে অন্যত্র সরিয়ে দেয়।
এবিষয়ে আরজিনা খাতুন বলেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে ১২ বছর ধরে বসবাস করছি। এই জায়গা থেকে আমাকে উচ্ছেদ করতে এর আগে হামলা করে আমাকে ও আমার স্বামীকে মেরে রক্তাত্ব জখম করে। গত ১৯ তারিখে রাত ১০টার সময় অনাধিকার প্রবেশ করে আমার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন দোকানে তালা মেরে বন্ধ করে দেয় এবং দোকানের তালা ভাঙ্গলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যায়। আমার জীবিকার একমাত্র পথ বন্ধ হওয়ায় আমি আমার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছি।
দখল নিতে চাওয়া জায়গায় ইট ফেলা এবং দোকান সরানোর বিষয়টি শান্তর পিতা মুছা কলিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জায়গার বিষয়টি নিয়ে মিমাংসার জন্য মেম্বারের কাছে বসা হয়েছিলো। তারা বিষয়টি মেনে না নেওয়ায় মেম্বার নিজে থেকে দোকান তুলে দিয়েছে।
দোকানে তালা লাগিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মিলন বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এই কাজ আমি করতে পারি না। আমি তাদের নিয়ে বসে ঝামেলা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আরজিনা ও শান্তদের মধ্যে যেন আর কোন ঝামেলা না হয় সে বিষয়টি রোজার পর একটি সুষ্ঠ সমাধানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা জানান তিনি।