কুষ্টিয়ায় পরীক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের জেরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ
সারাদেশ আইন-আদালত

কুষ্টিয়ায় পরীক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের জেরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীর পথ আটকে  ও উত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্রলীগের দু-পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর)  দুপরে উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পূর্বাশা ক্লাব এলাকায় এবং পরে যদুবয়রা ইউনিয়নের জয়বাংলা বাজারে পৃথক এ হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলায় যদুবয়রা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহেল রানা (২৮) সহ উভয়পক্ষের ৪ জন আহত হয়েছেন। আহত অন্যান্যরা হলেন- যদুবয়রা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন (৩২), ৬ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনি আহমেদ (২৩) ও চর এতমামপুর গ্রামের মৃত সোনাউল্লাহের ছেলে মো. বাবলু শেখ (৪০)। আহতদের কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, দুই এসএসসি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শেষে পান্টি কেন্দ্র থেকে যদুবয়রার দিকে আসছিল। পথিমধ্যে বেলা ১ টা ১৫ মিনিটের দিকে পূর্বাশা ক্লাব এলাকায় হেলমেট ও মুখবাধা অবস্থায় ৫ থেকে ৬ জন হাতুরী ও লাঠিসোঁটা নিয়ে পথরোধ ও উত্যক্ত করে শিক্ষার্থীদের। এসময় এক শিক্ষার্থীর ভাই রনি আহমেদকে হাতুরিপিটা করে রক্তাক্ত জখম করে।

এরপর খবর পেয়ে শিক্ষার্থীর বাবা ও স্বজনরা যদুবয়রা জয়বাংলা বাজারে অবস্থান নেন। বেলা দেড়টার দিকে জয়বাংলা বাজারে ওই শিক্ষার্থীর বাবা, স্বজন ও স্থানীয় দুপক্ষের  আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ,স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংঘর্ষ হয়। এতে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক গুরুতর জখম হন।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও পরাজিত চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সাবুর মধ্যে বিরোধ চলছে। তারা উভয় আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁদের বিরোধের জেরে ইউনিয়নে উত্তাপ বিরাজ করছে। 

এবিষয়ে আহত ছাত্রলীগ নেতা রনি আহমেদ বলেন, ছোটবোনকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। পথিমধ্যে পূর্বাশা ক্লাব এলাকায় পৌছালে হেলমেট ও মুখ বাধা ৫ থেকে ৬ জন পথ অবরোধ করে বোনকে উত্যক্ত করতে থাকে। বাঁধা প্রদান করলে আমাকে হাতুরিপিটা করে গুরুতর আহত করে। এসময় আমি কয়েকজনকে চিনে ফেলি। তাঁরা হলেন প্রতিপক্ষের বিল্লাল, সোহেল ও বায়োজিদ।'

তিনি আরো বলেন, আমরা এলাকায় রাজনীতি করি। পরে বুঝলাম প্রতিপক্ষরায় এ হামলা চালিয়েছে। উত্যক্তের শিকার পরিক্ষার্থীর বাবা শাজাহান আলী বলেন, ' আমার মেয়ে পরীক্ষা শেষে বাড়ি আসছিল। পথিমধ্যে প্রতিপক্ষের লোকজন ইভটিজিং করেছিল। পরে বাজারে তাঁদের সাথে হাতাহাতি হয়েছে। থানায় মামলা করব।

হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের চেয়ারম্যানের ওপর হামলার খবর পেয়ে বাটাম হাতে করে বাজারে ছুটে আসি। এসময় প্রতিপক্ষের তুষার, বাসার, আনিস মাষ্টার, রিপন মন্ডল আমাদের উপর হামলা চালায়। তুষারের হাতে কুড়াল ছিল। কুড়াল দিয়ে মাথায় কোপ মারেছে।'

যদুবয়রা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, প্রতিপক্ষরা চেয়ারম্যানকে ঘিরে ফেলেছে এমন খবরে বাজারে ছুটে যায়। বাজারেরে পৌছানো মাত্রই আনিস মাস্টার পিছন থেকে কোপ মারলে আমি মাটিতে পরে যায়।

এবিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান সাবু বলেন, বিরোধী পক্ষের লোকজন আমাদের দুই ছাত্রীকে ইভটিজিং করেছে। প্রতিবাদ করায় একজনকে হাতুরিপিটা করেছে। পরে ওরাই আবার জয়বাংলা বাজারে আমাদের লোকজনের উপর হামলা চালিয়েছে।

যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন,  প্রতিপক্ষের হামলা আমার দুজন গ্রুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। যদুবয়রা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জের উসকানীতে এহামলা হয়েছে। আমি এলাকার শান্তি রক্ষার্থে ইনচার্জের বদলি চাই এবং হামলাবারীদের দৃৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

কুমারখালী থানার (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন,  এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুপক্ষের চারজন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।