সবার সংবাদ ডেস্ক:
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে সেনানিবাসে সভা করার বিষয়ে এক ইউটিউবারের আনা অভিযোগের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘আজগুবি গল্পের একটা সীমা থাকা দরকার। মানুষের কল্পনারও একটা সীমা থাকা উচিত। সত্যের কাছাকাছি থাকলে মানুষ প্রতিবাদ করে। কিন্তু এমন মিথ্যা প্রোপাগান্ডার কোনও জবাব নেই। অবশ্য এমনটি শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, কার ক্ষেত্রে হচ্ছে না বলেন। সবার ক্ষেত্রেই কমবেশি হচ্ছে।’
শনিবার (৩০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) আয়োজিত ‘স্মৃতির মিনার: গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’ শীর্ষক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, “একটা ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে আগস্টের ৩-৪ তারিখ রাতে আমি নাকি ক্যান্টনমেন্টে (সেনানিবাসে) ছিলাম। সেখানে আর্মি অফিসারদের নিয়ে ‘ভারতের দালালদের’ সঙ্গে মিটিং করেছি। আমি অবাক হয়ে যাই! মানুষের কল্পনারও একটা সীমা থাকা উচিত।”
বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদসহ অন্যদের সঙ্গে ৩ আগস্ট রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার কথা জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের ১৯ নম্বর বিল্ডিংয়ে ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোস্তফা মামুনের বাসায় থেকেছি। আশঙ্কা ছিল, আমাকে মেরে ফেলবে, না হলে গ্রেফতার করবে।”
“আর ৪ আগস্ট সন্ধ্যার পর অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের একটি প্রোগ্রামে আমি অংশ নিয়েছি। সেটার অডিও আপনারা অনেকেই শুনেছেন। যেখানে আমি বলেছিলাম, ‘আমাদেরকে মেরে ফেলতে পারে। কারণ, সবাই আমাদেরকে বলছে পালিয়ে যেতে।’ তারপর সেদিন রাতেও ঢাবি শিক্ষক মোস্তফা মামুনের বাসায় ছিলাম। সবকিছুর একটা সীমা আছে।”
আসিফ নজরুল বলেন, “আমাকে যখন কেউ বলে আপনি ক্লিয়ার করেন (অভিযোগের বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেন) আমি বলি, আমি কী ক্লিয়ার করবো?
কিছু মানুষ ভারতীয় স্ক্রিপ্ট (চিত্রনাট্য) বাংলাদেশে রূপায়িত করার কাজে নেমেছেন বলে মনে করেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, উদ্দেশ্যমূলক সমালোচনার নামে অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্তিহীন করা, আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনৈক্য নিয়ে আসা এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। ‘আমাদের কাজের সমালোচনা করবেন, সমস্যা নেই। কিন্তু যখন সম্পূর্ণ আজগুবি, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করা হয়, তখন মনে হয় সমালোচনাটি অসৎ উদ্দেশ্যে করা।
গঠনমূলক পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘যদি নিজেরা নিজেরা ঝগড়াঝাঁটি করে নিজেরা নিজেদের কুৎসা রটাই, চরিত্র হনন করি, মিথ্যা তথ্য দিই, তাহলে ছাত্র-জনতার আত্মবলিদানের প্রতি অশ্রদ্ধা জানানো হয়।’
নিজের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, কারও প্রতি অভিযোগ নেই, সবার প্রতি অনুরোধ, সত্য জানার চেষ্টা করেন। মিথ্যা, অত্যাচার, নিপীড়ন, দোষারোপ এগুলো পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তির অস্ত্র ছিল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ। বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লেখক রাখাল রাহা, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, কবি ফেরদৌস আরা রুমী প্রমুখ।