‘রাজাকারের সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা বানানের চেষ্টা করবেন না’ বলে মন্তব্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, যারা নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসকে বিকৃতি করার চেষ্টা করছেন দয়া করে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করবেন না। দয়া করে তরুন প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দিবেন না। একটি পরিবারের তাবেদারি করতে যেয়ে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসকে কোনোভাবে বিকৃত করবেন না। দয়া করে রাজাকারের সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা বানানের চেষ্টা করবেন না।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ডে প্রীতি কাবাডি খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্ত্যবে তিনি এসব কথা বলেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাজাকারের ছেলের সাফাই গাওয়ার জন্য যারা ডিসি অফিসে যেয়ে আবেদন করেছেন তাদেরকে বলবো ‘আপনারা চলে যাবেন একদিন কিন্তু আপনাদের সন্তানকে মানুষ গাদ্দার বলবে।’। দয়া করে বাংলার অলো বাতাস খেয়ে আমাদের বাচতে দেন। একটি পরিবারের তাবেদারি করতে গিয়ে আমাদের অনেক কিছু বুলিয়ে দিচ্ছেন আপনারা। বের হয়ে আসেন এগুলো থেকে।
তিনি আরো বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, তিনি কারো একক সম্পত্তি বা একক সম্পদ নয়। উনি বাংলাদেশের সম্পদ, উনি বাঙালীর সম্পদ। উনি এই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়েছিল। তখন কিন্তু আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ছিলোনা। তখন কিন্তু আমরা সকলে এক ছিলাম। এই দেশের আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা, কৃষক, মজুর, রিক্সাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালা সকলে মিলে যুদ্ধ করেছেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। তারপরে দেশ স্বাধীনের পরে আমরা বিভক্ত হয়েছি, আমাদের মতপার্থক্যের দেখা দিয়েছে, আমরা দল গঠন করেছি, বিভিন্ন দল হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই রয়ে গেছেন। যদিও জাতির জনককে ৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই দেশের মানুষই হত্যা করেছে। ছোট্ট রাসেলকেও নিস্তার দেওয়া হয়নি। এজন্য জাতিগত ভাবে আমাদের খারাপ লাগে, কেন জাতির পিতাকে হত্যা করা হল?
আরও বলেন, আমাদের দেশাত্ববোধক যে গানগুলি ছিল, আমরা কিন্তু এখন শুনিনা। অথচ আমার মনে হয় গত ৫ বছর আগেও প্রত্যেকটি পাড়ায়-মহল্লায় এই গানগুলি বাজতো। এটাতো আমাদের অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বাচ্চাদেরকে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি যে বাঙালী, যেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে, জীবন দিয়েছে, সেই দেশে ৫০ বছরে এরকম কেন হবে? অথচ আমি বাসা থেকে আসতে কোথাও কোন মাইকের শব্দ পেলাম না, একটা দেশাত্ববোধক গানের শব্দ পেলাম না, একটা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের শব্দ পেলাম না। আমার নিজের কাছেই ভীষণ খারাপ লাগছে। আমরা কোথায় যাচ্ছি? সবাই আমরা নিজেদেরকেই বড় করতে চাচ্ছি। এই আমি আমি করতে করতে আমরা সমাজের অনেক কিছু ভুলে যাচ্ছি।
যে জাতি তাদের পূর্ব পুরুষদের সম্মান দিতে পারেনা, সে জাতি সামনে আগাতে পারেনা এবং তাদেরকেও কেউ সম্মান দেয়না। আপনারা আপনাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন। আর স্কুলে পাঠানোর পাশাপাশি কোচিংয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাচ্চাদের মাথা গরম করবেন না। তাদেরকে খেলার মাঠে নিয়ে যাবেন, গান শুনতে দিবেন, দেশের কথা বলবেন।
পরিশেষে সিটি মেয়র তার বক্তব্যে এলাকাবাসীকে বলেন, আমি খেলা খুব পচ্ছন্দ করি। খেলার মাঠ আমি করে দিবো। জায়গা পেলে অবশ্যই করে দিবো। এসময় তিনি ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইস্রাফিল প্রধানকে সুন্দর খেলার আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহুল আমিন, ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইস্রাফিল প্রধান, মহানগর যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরূর হুদা বাবুসহ মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার গনমান্য ব্যক্তিবর্গরা।