মুজিবনগরে জমির সীমানা প্রাচীর ভাংচুর, ভয়ে শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বন্ধ
টপ নিউজ মেহেরপুর

মুজিবনগরে জমির সীমানা প্রাচীর ভাংচুর, ভয়ে শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বন্ধ

সবার সংবাদ ডেস্ক:

মেহেরপুরের মুজিবনগরে জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে জোরপূর্বক জমির সীমানা প্রাচীর ভাঙচুর করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিপক্ষ কর্তৃক পরিবারের লোকজনদের হুমকী ধামকী অব্যাহত রেখেছেন। হুমকী ধামকীর পরিপ্রেক্ষিতে তানজিনা খাতুন নামের একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেনি বলে জানা গেছে।

বুধবার সকালের দিকে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার দুপুরের দিকে সরেজমিনে মহাজনপুরে গিয়ে মহাজনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ঐ ছাত্রী তানজিনাসহ আরও ৩ জন নারীকে বসতবাড়ির কক্ষে গ্রীলে ছিটকিনি আটক অবস্থায় পাওয়া যায়।

সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তানজিনা বাইরে এসে জানায়, আমার দাদা আব্দুল্লাহ'র সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে একই গ্রামের লাইলী ও তারেকের। এ নিয়ে গত সোমবার দু'পক্ষে গন্ডগোল হয়েছে। ওরা জোর পূর্বক বাড়িতে প্রবেশ করে প্রাচীর ভাংচুর করে এবং আমার  দাদা আব্দুল্লাহ, দাদি মরিয়ম ও বাবা শাফিউলকে মারধর করে আহত করে। ওদের হুমকী ধামকীতে দাদা ও বাবা এখনও বাড়িতে ফিরতে পারছেনা। পাশের বাড়ির লাইলী নামের একজন মহিলা আমি ঘর থেকে বাইরে বেরুলেই আমার পা কেটে ফেলবে বলে হুমকী প্রদান করে আসছে। স্কুলে গেলেও পথিমধ্যে আমাকে আটক করে পা কেটে দিলেই নাকি (কান টানলে মাথা আসবে) আমার বাবাকে পাওয়া যাবে বলে হুমকী অব্যাহত রেখেছেন। এ ভয়ে ভীতু হয়ে ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষা থাকলেও বুধবার পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করবো তারও উপায় নেই। বাইরে বেরুলেই নাকি পা কেটে দেওয়া হবে বলে হুমকী দিচ্ছে লাইলীসহ অনেকে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আব্দুল্লাহ'র প্রাচীর ভাংচুর করে মহাজনপুর গ্রামের মৃত সিতাব আলীর ছেলে সোহরাব হোসেন ওরফে কালু, মৃত আইজুদ্দিনের ছেলে আব্দুস সাত্তার ওরফে বাটুল, মৃত কাংলার স্ত্রী লাইলী খাতুন ও আরশেদ আলীর ছেলে তারেক। এনিয়ে উভয়পক্ষে কয়েকজন আহত হন। আব্দুল্লাহ ও তিনার ছেলে শাফিউল চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকায় বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ নেই। সুযোগ কাজে লাগিয়ে আব্দুল্লাহ'র জমিতে গত মঙ্গলবার থেকে মাটি ভরাট ও টিনের ঘরসহ রান্নার চুলা নির্মাণ শুরু করে তারেক ও তার পরিবারের সদস্যরা। যা সাংবাদিক ও পুলিশের উপস্থিতিতে বুধবার বিকেলে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হুমকী অব্যাহত রেখেছেন তারা। এদিকে গত সোমবার সীমানা প্রাচীর ভাংচুর ও মারধরের ঘটনায় মুজিবনগর থানায় লিখিতভাবে এজাহার দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ।

এজাহারে জানান, লাইলী ও তারেকের সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। বিগত আনুমানিক ৬ মাস পূর্বে আসামী সোহরাব হোসেন ওরফে কালু, আব্দুস সাত্তার ওরফে বাটুল, লাইলী খাতুন ও তারেকের উপস্থিতিতে সার্ভেয়ার দ্বারা মাপজোখের পর সীমানা চিহ্নিত করিয়া পাকা দেওয়ালের জন্য পোতা নির্মাণ করা হয়।

গত  সোমবার উল্লেখিত পোতায় প্রাচীর নির্মাণ কাজ চলছিল। উক্ত দিনে সকাল ৯ টার দিকে আসামীগণ কাঠের বাটাম, শাবল ও হাতুড়িসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে আমার জমির মধ্যে অনাধিকার প্রবেশ করে জমির সীমানা প্রাচীর ভাঙচুর করতে থাকে। আসামীরা সীমানা প্রাচীর ভাংচুর করে প্রায় ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিসাধিত করে। এ সময় ভাঙচুরে নিষেধ করলে বাটুল ও তারেক আমাকে কিল, ঘুষি মারতে থাকে। আমার চিৎকারে বড় ছেলে শাফিউল আসামীদের হাত থেকে আমাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসলে কালু তার হাতে থাকা কাঠের বাটাম দ্বারা শাফিউলকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথা বরাবর সজোরে আঘাত করলে (মাথার সম্মুখভাগে কপালের ডান পাশের উপরিভাগে লেগে) কেটে রক্তাক্ত মারাত্মক গুরুতর যখম হয়। উক্ত আঘাতে শাফিউল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে কালু'র হাতে থাকা কাঠের বাটাম দ্বারা ডান হাতের কনুইয়ের উপর, পিঠ, কোমর ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়িভাবে আঘাত করে  জখম করে ও অন্যান্য আসামীরা একযোগে আমাকে ও শাফিউলকে এলোপাতাড়ি ভাবে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে নীলা পোলা যখম করলে আমাদের চিৎকার আশে পাশের লোকজন ছুটে এসে আমাদের দু'জনকে উদ্ধার করে।

এ সময় আসামীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্থান ত্যাগ করে। আসামীদের দ্বারা আব্দুল্লাহ'র পরিবারের লোকজনের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় শাফিউলকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শাফিউল কিছুটা সুস্থ হলে আইনী সহায়তা ও সুষ্ঠ বিচারের দাবীতে এজাহার দায়ের করেন তার বাবা আব্দুল্লাহ। এদিকে সামান্য বিষয় নিয়ে ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বারকে মারধর ও তারেক কর্তৃক প্রাচীর ভাংচুর করে জোরপূর্বক ঘর নির্মাণে জমি নিয়ে বিরোধের সমাধান পেছালো বলে জানান ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার।

মহাজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলুকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত রয়েছেন। এসময় তিনি ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বারকে মারধরের বিচারের পরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের সমাধানের কথা জানান। মহাজনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হুমকী ধামকীর কারণে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেনি তা অজানা বলে জানান। তিনি শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ-খবর নেবেন এবং বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটিকে জানিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।

মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেলকে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, কোমরপুর ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ দু'বার ঘটনাস্থলে গেছে বলে জানান। একইসাথে শিক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে কেন যেতে পারেনি তা ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।