সবার সংবাদ ডেস্ক:
পিবিআই ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ \ পরিবেশ অধিদপ্তর বললো ৯৯ ভাগ ভাটা অবৈধ
মেহেরপুরে ইটভাটার মাটি বহনকারী মাটি পড়ে প্রতিনিয়ত জেলার বিভিন্ন সড়কের ক্ষতি করছে, যা সড়ক র্দুঘটনার বড় কারণ হয়ে দাাঁড়চ্ছে, এতে সরকারী নতুন রাস্তা অচিরেই চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে, একই সাথে অবৈধ ইটভাটার অস্তিত্ব পরিবেশকে হুমকীতে ফেলছে বিষয়সমূহ বন্ধে আদালত স্ব-প্রণোদিত আদেশজারী করেছেন।
মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট-১ম আদালতের বিচারক এসএম শরিয়ত উল্লাহ ৭ জানুয়ারী শনিবার এ আদেশজারী করেন। আদালত ইট ভাটার মাটি পড়ে সরকারী রাস্তার ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, সড়ক চলাচলকারীদের জন্য জীবনের হুমকী বিষয়টিকে দন্ডবিধির ২৯০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন। সেই সাথে জেলায় ১০৩টি ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশ লাইসেন্স বিহীন, অবৈধ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন হওয়া বিষয়টি ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩ এর ধারা ৪ ও ৮ এর লঙ্ঘন এবং উক্ত আইনের ধারা ১৪ ও ১৮ অনুযায়ী অর্থদন্ড ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন।
উক্ত বিষয়সমূহ আদালতের গোচরীভ‚ত হলে আদালত স্ব-প্রণোদিত আদেশজারী করে বিষয়সমূহ তদন্তপূর্বক ২৩ জানুয়ারীর মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিশেষ পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়াকে এবং উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে পিবিআইকে ইন্সপেক্টর পদমর্যদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তা দ্বারা সুষ্টু তদন্ত ও অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, পরিবেশ অধিপ্তরের নিয়মের তোয়াক্কা না করে মেহেরপুরে যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন এবং ইটভাটার মাটিতে সড়ককে পিচ্ছিল করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা ক্রমশ: বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংবাদপত্রে এবং টেলিভিশনে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কিছুতেই থামছে না ইটভাটা স্থাপনের নামে এই দুর্বৃত্তায়ন। ফলে, প্রতিবছর সামান্য কুয়াশা কিংবা বৃষ্টিতে ইটভাটার মাটি পড়ে রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়ছে। বেড়ে যাচ্ছে সড়ক দুঘর্টনা। ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রাণ। আবার সড়কপার্শ্বে এবং শহরের মধ্যে ইটভাটা করে যেমন পরিবেশ দুষণ করছে। তেমনি আবাদী জমির মধ্যে ভাটা করে আশপাশের ফসলী জমির ফসলহানি সহ বিস্তীর্ণ আবাদী জমির ক্ষতি করছে। সেই সাথে ইট ভাটায় প্রতিদিন দেদারসে শত শত টন কাঠ পুড়িয়ে বৃক্ষ সম্পদকে উজার করা হচ্ছে। ফিক্টস ভাটা বন্ধ এবং অবৈধ ইটভাটা স্থাপনে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পরও মেহেরপুরে ৯৯ভাগ ইটভাটা পরিবেশের ছাড়পত্র এখনও চলছে। অভিযোগ রয়েছে-ভাটা মালিকদের অর্থদাপটে সংশ্লিষ্ট আইনী সংস্থাগুলো মাঝেমধ্যে সোচ্চার হলেও অজানা রহস্যে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। বরং কাঠপুড়ানো এবং ফসলী জমিতে ভাটা করার দায়ে মুজিবনগর ও আমঝুপি পোড়াপাড়ায় অভিযান পরিচালনা ২/৩ জন ভাটা মালিককে জরিমানা করা হলেও একই অপরাধে যুক্ত অন্য ভাটা মালিককে জরিমানা না করায় আইনী অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
মেহেরপুরে ইট ভাটাকে কেন্দ্র করে জেলায় মাটি বেচাকেনার বাণিজ্য ফুলেফেঁপে উঠেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্যদের অভিযোগ-প্রতিবারের মত এবারও অক্টোবর-২০২২ থেকে শুরু হয়েছে ইট ভাটা কার্যক্রম। ফলে, বিস্তীর্ণ জমি ধ্বংস করে প্রধান উপকরণ মাটি কেনাবেচা এখন তুঙ্গে। ভাটা মালিকরা ফসলী জমি লীজ নিচ্ছে। পরে সেই জমির মাটির উপরিঅংশ (কৃষি জমির টপ সয়েল) কিনে নিয়ে জমির উর্বরা শক্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কেউবা সরকারী পুকুর কিংবা মৎস্য বিলের মাটি পাচার করে সেই মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করে জলাশয় ধ্বংস করছে। কেউবা রাতারাতি সরকারী জমির মাটি বেনাবেচা করে অর্থদাপটে ফুলেফেঁপে উঠছে।
ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান আতু ইট ভাটার মাটিতে রাস্তার ক্ষতি প্রসঙ্গ স্বীকার করে বলেছেন- আমরা বিষয়টি দেখেছি। প্রতিটি ভাটা মালিককে স্ব-এলাকার পরিস্কার করতে বলেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার কথাও বলা হয়েছে। কারণ সরকারী রাস্তায় মাটি ফেলে রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ করা অন্যায় কাজ।
একই প্রসঙ্গে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেছেন- এই ধরনের খবর পেলেই ঘটনাস্থলে মোবাইল কোর্ট পাঠানো হচ্ছে। ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা জনদুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তবে-অবৈধ ইটভাটা বন্ধ, পরিবেশের ক্ষতি, ফসলী জমিহানি রোধ সহ আদালতের স্ব-প্রণোদিত আদেশ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমানের জানান- মেহেরপুরে একটি ইটভাটা ছাড়া সবই অবৈধ। কোন ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। এ সংক্রান্ত লিষ্ট সহ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মেহেরপুর জেলা প্রশাসককে পত্র পাঠানো হয়েছে। মেহেরপুরে সব ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ পুড়িয়ে বৃক্ষ সম্পদ ধ্বংস করছে সত্য। খুব শীঘ্রই পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কর্মকর্তা সহ একটি দল মেহেরপুরে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যক্রম পদক্ষেপ শুরু করবে।