আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বৈরুত ও লেবাননের অন্যান্য অঞ্চলে একের পর এক ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো এসব বিস্ফোরণে প্রাণহানি ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলকে এই হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। লেবাননের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বুধবারের বিস্ফোরণে ২০ জন নিহত ও ৪৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এর আগের দিন, মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর হাজার হাজার পেজার বিস্ফোরিত হলে ১২ জন নিহত ও প্রায় ৩ হাজার আহত হন।
দুটি বিস্ফোরণ পরপর ঘটায় দেশটির জনগণের মধ্যে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। হামলাটি মূলত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, সোলার সেল ও ওয়াকি-টকি রেডিও লক্ষ্য করে হয়েছিল। এসব ডিভাইস প্রায় পাঁচ মাস আগে একই সময়ে কেনা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুধবার সন্ধ্যাবেলা কর্তৃপক্ষ সন্দেহভাজন ডিভাইসগুলোকে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস করার কাজ চালাচ্ছিল। বিশেষ করে যেসব ডিভাইস মঙ্গলবারের তুলনায় বেশি আধুনিক ও বেশি ব্যবহৃত। ধ্বংসের কাজে নেতৃত্ব দেওয়া মারিয়া বুস্তানি জানিয়েছেন, যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ওয়াকি-টকিগুলো বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। হয়তো একই ব্র্যান্ড নয়, কিন্তু আসলে হচ্ছে জানা নেই। নিরাপদ থাকাই ভালো।
বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের বাইরে বুধবার আহতদের আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুরা একত্রিত হয়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অবস্থা জানতে কালো পোশাক পরা অনেকেই সেখানে উপস্থিত হন। ভেতরে এত মানুষ রক্ত দিতে এসেছিল যে, বুধবার আর রক্তের প্রয়োজন হয়নি বলে নার্সরা জানিয়েছেন।
হাসপাতালটির প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তা সালাহ জেইনেলদিন জানান, আমাদের এখনও ১৪০ জন রোগী রয়েছে এবং কয়েকজনের এখনো অস্ত্রোপচার চলছে।১৪০ রোগীর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর, তবে কেউ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নেই। অনেকেই আঙুল বা চোখ হারিয়েছেন।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নাজিব মিকাতি বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনার পরেও হাসপাতালগুলো নতুন আহতদের সামাল দিতে পারছে। বুধবার অনেকেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তবে ৪০ বছর বয়সী আলি নামের এক ব্যক্তি তার পরিচিত একজনকে দেখতে এসেছিলেন এবং কথা বলেন। আগের দিন যখন একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটে তখন তিনি বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ছিলেন। তিনি বলেন, প্রতি পাঁচ থেকে ১০ সেকেন্ড পর পর একটা করে বিস্ফোরণ শুনছিলাম।
কী ঘটেছে ও সামনে কী হতে পারে?
এই হামলাগুলো লেবাননের জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ হামলাকে উদ্দেশ্যমূলক ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়ে আলোচনা চলছে। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে গত অক্টোবর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তে সংঘর্ষ চলছে। হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, তারা হামাসকে সমর্থন করছে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি হলে তারাও যুদ্ধ থামাবে। অন্যদিকে, ইসরায়েল লেবাননে যুদ্ধ বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উত্তরাঞ্চলের মানুষদের ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য যুদ্ধের লক্ষ্য আরও বিস্তৃত করার ঘোষণা দেন। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের সামরিক কমান্ডার লেবাননে সম্ভাব্য আগ্রাসনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জানান, যুদ্ধ নতুন একটি পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
এদিকে, হিজবুল্লাহ পাল্টা হামলার কথা জানিয়েছে। মঙ্গলবারের হামলার পর হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান হাসান সাফিয়েদ্দিন বলেন, ইসরায়েল নতুন সংঘর্ষ শুরু করেছে এবং এর জবাব হিসেবে ‘বিশেষ শাস্তি’ দেওয়া হবে।