জীবনের পড়ন্ত বেলায় একটু মাথা গোঁজার ঠাই চাই
টপ নিউজ মেহেরপুর

জীবনের পড়ন্ত বেলায় একটু মাথা গোঁজার ঠাই চাই

সবার সংবাদ ডেস্ক:

প্রতিদিন কত যে খবর আসে কাগজের পাতা ভরে, আবার জীবন খাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে..! আমাদের সমাজে এমন অনেক অসহায় মানুষ আছেন, যাদের খবর হয়তো সবার অগোচরেই থেকে যায়। তাদেরই একজন মেহেরপুরের গাংনী পৌর এলাকার বাঁশবাড়ীয়া পশ্চিম পাড়ার ভূমিহীন হবি। জমি না থাকায় মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের পাশে নিচু যায়গা ভরাট করে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে কুড়ে ঘর বেঁধে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন হাবিবুর রহমান হবি।

রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ৫০ বছর যাবত সরকারি রাস্তার জমিটুকু সম্বল করে ছেলে মেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে কুড়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। বাঁশ ও সিমেন্টের খুঁটির ওপর পাটকাঠি আর টিনের বেড়া দিয়ে কোনমতে তৈরি করা হয়েছে জরাজীর্ণ ঘরটি। তাতেই কোনরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে হবির পরিবার। নেই বিশুদ্ধ পানি কিংবা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা।

নিদারুণ দুঃখ, কষ্ট, অভাব অনটনের অনিশ্চিত জীবন হবির পরিবারের। সরকার গরিব অসহায় মানুষের জন্য অন্ন বস্ত্র ও বাসস্থানের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করলেও তার পরিবার সেই সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। হাবিবুর রহমান হবির শেষ সম্বল বলতে সরকারি রাস্তার জায়গায় নির্মিত জরাজীর্ণ ঘরটি। কিন্তু সেটিও এখন থাকছে না।

জানা গেছে, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের রাস্তা সংস্কার ও প্রশস্তকরনের জন্য সড়ক ও জনপদের লোক এসে হবির পরিবারকে বসতঘর ভেঙ্গে অন্যত্র চলে যেতে বলেছে। সরেজমিনে গেলে কথা হয় হাবিবুর রহমান হবি ও তার পরিবারের সাথে। হবি জানান, বয়সের ভারে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে কোন কাজ করে খাওয়ার মতো শারীরিক শক্তি এখন আমার নেই, সরকারি কোন সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন বয়স্ক ভাতা কার্ড ছাড়া তেমন সুযোগ সুবিধা পায়নি। অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি আরো বলেন, কোনমতে একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করলেও এবার বুঝি মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও থাকবে না। কয়দিন আগে সড়ক ও জনপদের লোকজন এসে ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা বলে গেছে। এখন আমি এই বৃদ্ধ বয়সে পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।

হাবিবুর রহমান হবির স্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই কুড়ে ঘরে বসবাস করে আসছি। তাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলেরা বউ নিয়ে শশুড় বাড়ি থাকে, বাবা মায়ের কোন খোঁজ খবর তারা নেয় না। শেষ সম্বল যা ছিলো সব বিক্রি করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়েই দীর্ঘদিন সরকারি রাস্তার পাশে কুড়ে ঘর বেঁধে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের হাকিম, আবু জাফর-সহ এলাকাবাসীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে হাবিবুর রহমান হবি রাস্তার পাশে কুড়ে ঘরেই বসবাস করছে। কয়েকদিন আগে সড়ক ও জনপদের লোক এসে নাকি রাস্তা সংস্করণের জন্য ঘরটি ভেঙ্গে অন্যত্র চলে যেতে বলেছে। এই বৃদ্ধ বয়সে পরিবারটি কোথায় যাবে এখন এ চিন্তায় তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এলাকাবাসীরা আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদের ঘর নাই, তাদের পাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। এমন একটি ঘর তৈরি করে দিলে জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে পরিবার পরিজন নিয়ে একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারতো এ পরিবারটি।

এ বিষয়ে উক্ত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত দেখে আসছি হাবিবুর রহমান হবির পরিবারটি সরকারি রাস্তার জায়গায় বসবাস করে আসছে। শুনেছি তার ছেলেরাও আর বাবা-মায়ের খোঁজখবর নেয় না। উপজেলার মতো পৌরসভায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বরাদ্দ না থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও আমরা তার জন্য সরকারি একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে সক্ষম হচ্ছি না। তবুও চেষ্টা করে দেখি এই অসহায় পরিবারটির মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই করে দিতে পারি কিনা।