সবার সংবাদ ডেস্ক:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হলুদ পাঞ্জাবি পরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন ঘটনায় অবাক হতবিহব্বল ও ক্ষুদ্ধ সবাই। এই ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছেন লেখক ও পাঠক ফোরাম (বৃহত্তর কুষ্টিয়া) এর সদস্যরা। হলুদ রঙ একটি নিদিষ্ট উপলক্ষ্যে ব্যবহৃত হয়। হলুদ জ্ঞান বিদ্যা বিবেকের প্রতীক। আমরা সকলেই জানি হলুদ ভালবাসার প্রতীক।
হলুদ রঙ দিয়ে বসন্ত, আনন্দ, উষ্ণতা, ঈর্ষা ইত্যাদি বোঝানো হয়। তাহলে ২১ ফেব্রæয়ারী শহিদ দিবস শোকের রাতকে এই গোষ্টিটি কেন বসন্ত ও আনন্দের প্রতীক হিসাবে পালন করতে কালো পোশাকের বদলে হলুদ পোশাক ব্যবহার করলো!
রোববার দিবাগত রাত ১২টা ১মিনিটে প্রথম প্রহরে সবাই যখন কালো পোশাকে কিংবা কালো ব্যাচ পড়ে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের সাথে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে ব্যাস্ত ঠিক তখনই হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে লেখক ও পাঠক ফোরাম (বৃহত্তর কুষ্টিয়া) সদস্যদের উপস্থিতি সবাইকে অবাক করে দেয়।
তারা দলবদ্ধভাবে হলুদ পোশাকে শহিদ বেদীতে উঠে ফুল দিয়ে আবার দলবদ্ধভাবে শহিদ বেদী ত্যাগ করেন। হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে শহিদ বেদীতে একটি গোষ্ঠীর ব্যাতিক্রমী উপস্থিতি এবং শ্রদ্ধাঞ্জলির ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে ওঠে এবং তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবসে হলুদ পাঞ্জাবি পরে এই গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশে ব্যস্ত তারা। দিবসটিতে শহীদদের আত্মত্যাগ ভুলে গিয়ে তারা বসন্ত বরণের মত উৎফুল্ল ও আনন্দ চিত্তে হলুদ পোশাকে শহীদ মিনারে ফুল দিচ্ছেন। এই দেওয়াটা কতটুকু আবশ্যক, কতটুকু যুক্তিযুক্ত, কতটুকু বিবেচক এই প্রশ্ন এখন সকলের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
জানতে চাইলে লেখক ও পাঠক ফোরাম (বৃহত্তর কুষ্টিয়া) অঞ্চলের সদস্য পথিকের পাঠশালার পরিচালক রফিকুল ইসলাম পথিক জানান, বিষয়টা সিরাজুল ইসলাম স্যার জানেন। তিনিই এই অনুষ্ঠানের মাথা। এ বিষয়ে তিনিই ভাল বলতে পারবেন।
লেখক ও পাঠক ফোরাম (বৃহত্তর কুষ্টিয়া) অঞ্চলের আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম জানান-ইতোপূর্বে লেখক ও পাঠক ফোরাম থেকে একটি অনুষ্ঠানের জন্য কমন পাঞ্জাবি দেওয়া হয়েছিল। সেই পোশাকটাই হয়তো কেউ কেউ পরে এসেছে।
লেখক ও বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক রফিকুর রশিদ রিজভী জানান, সন্দেহ নেই যে আমরা বসন্তকালেই আছি। যে কোনো দিন ওই বসন্তের পোশাক পরা যায়। তবে আজকের দিনটা বাঙালির কাছে ভাষা আন্দোলনের দিন। এ দিনে আমরা স্মরণ করব ভাষা শহীদদের। সেটার জন্য আজকের দিনে এই হলুদ পোশাক কি আবশ্যক ? এর দিনটিতে বসন্তের পোশাক পরা অপেক্ষা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোই জরুরী কর্তব্য বলেন তিনি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোছাঃ রনী খাতুন জানান, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নাই। আমার মনে হয়নি যে বিষয়টি কমেন্ট করার যোগ্য। তারা যেভাবে মনে করেছে সেভাবেই তারা পালন করেছে। এই বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। যারা এই হলুদ পোশাক পরে এসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাদের কাছ থেকে মন্তব্য নিলেই ভাল হয়।
এদিকে মেহেরপুর শামসুজ্জোহা পার্কে শহিদ মিনারে যাওয়ার রাস্তায় এবার রেড় কার্পেট বা লাল গালিজা বিছানো ঘটনা অনেকের নজর কেড়েছে এবং এই নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। শহিদ দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে লার গালিচার প্রয়োজনীয়তা ছিল কিনা এই প্রশ্ন করেছেন অনেকেই।
একাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠক সমালোচনা করে বলেছেন- এগুলো বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই না। এসব বাড়াবাড়ি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ এবং রুচিবোধকে বিকৃত করে দিচ্ছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এবং জাতীয় এই দিবস নিয়ে হেলাফেলা করা কোনক্রমেই কাম্য নয়।