সবার সংবাদ ডেস্ক:
যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন নৌকার প্রতীকে ভোট করার জন্য মনোনয়ন চাইবো, এটা আমার পারিবারিক সিদ্ধান্ত। এবারও সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবো। না দিলে দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে কাজ করবো। তবে এবার গত দুইবারের চাইতে ভাল ভোট হবে, মানুষ যেমন চাই তেমন নিরপেক্ষ ভোট হবে। বিএনপি সহ এই নির্বাচনে নিবন্ধিত সবদল অংশ নেবে। নির্বাচনে সবদল না এলে সে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হয় না। ভোট এদেশের মানুষের কাছে উৎসব। আমার মনে হয় ভোটাররা এবার তেমন উৎসবমূখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবে। নির্বাচনে ইভিএম এবং এর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে বলেন-দলীয়ভাবে নয়, ব্যাক্তিগতভাবে আমি ইভিএম পছন্দ করি না। কারণ নির্বাচনে ভোটারদের ভোট গ্রহণে ইভিএম আস্থার এবং বিশ্বাসের কোন পদ্ধতি না। এই কথাগুলো বললেন-আওয়ামী লীগ নেতা মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি টিভি টক-শো ব্যাক্তিত্ব সাংস্কৃতিক বোদ্ধা প্রফেসর আব্দুল মান্নান।
রবিবার রাত্রে মেহেরপুর প্রেস ক্লাবে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরে আওয়ামী লীগের সাবেক এই এমপি আগামী নির্বাচন এবং রাজনীতি নিয়ে খোলামেলাভাবে নিজের অভিপ্রায় প্রকাশ করেন। এতদিন এলাকায় আসেননি, ভোটারদের খোঁজ নেননি, নিজের জমিটুকুও বিক্রি করে মেহেরপুরের সাথে নাঁড়ির সম্পর্কটুকুও ছিন্ন করেছেন এখন ভোটারদের কাছে কি বলবেন প্রশ্নে তিনি বলেন- এলাকায় একদম আসিনা সত্য নয়। ক্ষনিক সময়ের জন্য হলেও আসি। তবে মোবাইলে মানুষের সাথে যোগাযোগ ঠিকই থাকে। আজকাল এমপি মন্ত্রী হলে দেশে বিদেশে বাড়ি গাড়ি সবই হচ্ছে। আমি দুইবার এমপি হয়েছি। ঢাকায় ভাড়া বাড়িতে থেকেছি। মেহেরপুরে আত্মীয়র বাড়ি থেকে পলিটিক্স করেছি। শেষে শহরের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে ঢাকায় একটা ঠিকানা গড়েছি। ফলে মেহেরপুরের সম্পত্তি বিক্রি করলেও আমার গ্রাম চাঁদবিলের সব সম্পত্তি রয়েছে। আমি বাকী জীবন গ্রামেই থাকতে চাই। ঢাকায় অসুস্থ কেউ গেলে আমি সাধ্যমত তাদের চিকিৎসা সহায়তা করি। এক্ষেত্রে কোন বাছবিচার করি না।
সক্রিয় রাজনীতিতে দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর নিজেকে কতটুকু যোগ্য প্রার্থী মনে করেন প্রশ্নে বলেন- মেহেরপুরের রাজনীতিকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আমিই নিয়ে গেছি। আমিই প্রথম টিভি টক-শো সহ যে কোন অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় দ্বিধা না রেখে মেহেরপুর মুজিবনগরকে তুলে ধরে এই মাটির গুরুত্ব জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছি। প্রতিটি কর্মীর সাথে রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। তৃণমূলের প্রতিটি কর্মীর নাম জানি। তাদের হাঁড়ির খবর রাখি। বিশেষ করে নারী মহলে নিজের জনপ্রিয়তা বেশি উল্লেখ করে বলেন-এবার নারীদের সিদ্ধান্তে পুরুষরা ভোট দেবে। তিনি বলেন- রাজনৈতিক জীবনে কারো সাথে দুর্ব্যবহার করিনি। কারো ক্ষতি করিনি। আমার সময় সব দলের মানুষ নির্বিঘ্ন চলেছে। বিএনপি’র প্রয়াত এমপি আহম্মদ ভাইকে শ্রদ্ধা করি। আমি বিএনপির সময়ে মুজিবকোর্ট পরে খালেদা জিয়ার মিটিংয়ে এমপি হিসাবে গিয়েছি। আহম্মদ ভাই আমাকে বরণ করেছেন। কিন্তু রাজনীতির সেই মধুর সম্পর্ক আজ নেই।
প্রায় ১ যুগ পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি আপনি, ভোট শেষে আবার হারিয়ে যাবেন কিনা প্রশ্নে বলেন- আমি গণমাধ্যম প্রিয় মানুষ। যখন এমপি ছিলাম তখন যতবার এলাকায় এসেছি ততবার সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে বসেছি। এলাকার সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি। এক সাথে আড্ডা মিষ্টিমুখ করেছি। জানি এটা অন্য এমপিরা করে না। আবারও এমপি হলে গণমাধ্যমকে নিয়েই চলবো। আমি হারিয়ে যায়নি। পদপদবী ও উদ্দেশ্য না থাকায় গণমাধ্যমের সামনে আসিনি। সাম্প্রতিক রাজনীতি ও প্রশাসন নিয়ে বলেন- রাজনীতিতে ব্যবসায়ী আমলারা ঢুকে পড়েছে। এটা সুস্থ রাজনীতির জন্য সুখকর না। এমপিরা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন যে আজকাল টিএনও এমপিদের সম্মান করেন না, স্যার বলেন না এটা খুবই দু:খজনক। ডিসিদের ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সি জানা উচিৎ। আমার সময় ডিসি এসপিরা এমপিদের সামনে চেয়ারে বসার সাহস পায়নি।
সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের উত্তর তিনি কৌশলে এড়িয়ে গেলেও বলেছেন এখন থেকে সাংবাদিকদের সাথে বারবার দেখা হবে, কথা হবে, সব প্রশ্নের উত্তর একদিনে নাইবা হলো। এই সময় মেহেরপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফারুক হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক মন্টু সহ সমস্ত প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে বলেন- নিজের কিছু কষ্ট খেদ থাকলেও মেহেরপুর আমাকে কষ্ট দেয়নি। বরং যে সম্মান মর্যাদা মেহেরপুর আমাকে দিয়েছে, তা আমি আজন্ম মাথায় নিয়ে চলতে চাই।