ডিস ডন মাউরা বাবুর সাতকাহন ১
টপ নিউজ আইন-আদালত

ডিস ডন মাউরা বাবুর সাতকাহন ১


সোজাসাপটা রিপোর্ট: ২০১৭ সালের নভেম্বর মাস। বন্দর থানায় দায়ের করা একটি চাঁদাবাজির মামলায় নাসিক ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে মাউরা বাবুকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বাবুর বিরুদ্ধে হাসান নামে বন্দর উপজেলার এক ডিস ব্যবসায়ী বন্দর থানায় বাদী হয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। ওই চাঁদাবাজি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। ডিস ওরফে বাবুর বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এ মামলায় ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় হস্তান্তর করেছে।
ডিস ব্যবসায়ী হাসানের নিয়ন্ত্রনাধীন বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা থেকে আলীনগর অঞ্চলের কয়েক লক্ষ টাকার ডিস ক্যাবল (তার)সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কেটে নিয়ে যায় বাবুর সশস্ত্র সন্ত্রাসী  হিসেবে পরিচিত সজিবসহ একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এতে ২ হাজারেরও উপরে গ্রাহক ডিস লাইন থেকে বন্ধ থাকে বেশ কয়েকদিন।
এ ঘটনায় কাউন্সিলর আব্দুল করিম ওরফে মাউরা বাবু ডিস ব্যবসায়ী হাসানের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় ডিস ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয়। ওই ঘটনার পর ২৩ তারিখে হাসান বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন মাউরা বাবুকে প্রধান আসামী করে। কিন্তু এরপরও কোনো কাজ হয়নি। এতে বাবু আরো বেপরোয়া হয়ে সোনাকান্দা, আলীনগর এলাকায় বাবু তার বাহিনীর মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে ডিস লাইন সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু করে।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ ওই ব্যবসায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তিনি মাউরা বাবুর নানা অপকর্ম তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি মাউরা বাবুর এসব অপকর্ম উত্থাপন করে সংবাদ সম্মেলনও করেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবাস চন্দ্র সাহা সেসময়ে জানান, হাসান নামে বন্দর এলাকার এক ডিস ব্যবসায়ী বাবুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হুমকি ও তার ব্যবসা দখলের অভিযোগ এনে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় ডিস বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের নরঘাতক নূর হোসেনের নাম কে না চেনে। প্যানেল মেয়র নজরুলসহ সাতজন ব্যাক্তিকে অপহরনের পর হত্যার ঘটনায় মূল আসামি নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। নূর হোসেনের এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠার পেছনে ছিল কতিপয় প্রভাবশালী ব্যাক্তি। তার ছত্র ছায়াতেই এমন ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছিলেন নূর হোসেন। বর্তমানে ফাসির দন্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে আছেন তিনি। তবে শহরে উত্থান হচ্ছে আরেক নূর হোসেনের। নূর হোসেনের মতই এবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ডিস ব্যাবসায়ী আব্দুল করিম মাউরা বাবু।
শহরে বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে তার একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। বিভিন্ন এলাকায় নিজের এসকল পোষ্য সন্ত্রাসীদের দিয়ে ডিশ ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের ডিশ ব্যাবসায়ের সেক্টরে নিজের পেশী শক্তির মাধ্যমে একচ্ছত্র আধিপত্য কয়েম করেছেন বাবু। দিন দিন বাবুর বেপরোয়া হয়ে ওঠার পেছনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ব্যার্থতাকেও দুষছেন অনেকে। সম্প্রতি শহরের আমলাপাড়া এলাকায় জঙ্গি স্টাইলে স্বসস্ত্র মহড়া দিয়ে ওয়াইফাই ও ডিস ক্যাবলের ব্যাবসায় দখলে নিতে চেষ্টা চালিয়েছে ডিস বাবুর সন্ত্রাসীরা।
এর আগে গত ১০ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সাথে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের সাথে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় অস্ত্র সহ উপস্থিত হয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। বাবুর অস্ত্র নিয়ে নগর ভবনে উপস্থিত হওয়ায় সেদিন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েতে হয়েছিল।
এর আগেও একাধিকবার অস্ত্র বহন করার কারনে তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় তার বিরুদ্ধে অপহরণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীর বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালে বন্দরের এক ডিশ ব্যাবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবীর অভিযোগে জেলেও গিয়েছিলেন বাবু। সেসময় কিছুটা ব্যাকফুটে থাকলেও সময়ের সাথে সাথে আরও ভয়ংকর রুপ ধারণ করছেন এই কাউন্সিলর।
জানা যায় স্থানীয় এক সাংসদের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায়। এদিকে ডিস ওরফে মাউরা বাবুর সন্ত্রাসীদের হাতে  শহরের স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন এলাকায় ডিস ও ওয়াই-ফাই ব্যাবসায়ীরা এক রকমের জিম্মি হয়ে আছেন। এদিকে ডিস বাবুর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে বাবুকে নিয়ে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনও বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছে।