সবার সংবাদ ডেস্ক:
মার্কিন অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল শনিবার ঢাকা আসবে। এই দলে আছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, যিনি ভারতের দিল্লি হয়ে ঢাকা আসবেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দিল্লিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত প্রতিরক্ষা সংলাপে অংশ নেবেন। সংলাপে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও গুরুত্ব পাবে। ঢাকাকে কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ না করতে দিল্লিকে বার্তা দেবে ওয়াশিংটন। বাংলাদেশে গত পাঁচ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। একইসঙ্গে ঢাকার চাহিদাগুলো জানতে চায় তারা।
মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ঢাকায় আসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মার্কিন কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সম্পর্ক গভীর করতে আগ্রহী।
আলোচনা তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেবে বলেও জানা গেছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গেও প্রতিনিধি দলের বৈঠক হবে।
পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন জানান, মার্কিন প্রতিনিধি দলের এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের গুরুত্ব প্রমাণ করে। সফরে বহুমাত্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ (শনিবার) সকালে ঢাকায় পৌঁছেছে। তাদের বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
প্রতিনিধিদলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুসহ ট্রেজারি বিভাগ, ইউএসএআইডি এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের সদস্যরা রয়েছেন। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনাটি বহুমাত্রিক হবে এবং বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে। জানা গেছে, সফরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রতিনিধি দলের ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবীদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার মেগাফোন কূটনীতিতে চাপের মুখে পড়েছে ভারত। এর ফলে এক মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আশ্চর্য হয়েছে ভারত। বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে রয়েছে তা বিশ্লেষণ করেছেন বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সম্পাদক আনবারাসান ইথিরাজান।
ভারতপন্থী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন ভারত ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিক দিয়ে সবচেয়ে ভালো সময় পার করেছে। এছাড়া শেখ হাসিনা ভারত বিরোধী গোষ্ঠীকে কঠোর হাতে দমন এবং সীমান্তের অমিমাংসীত কিছু বিষয় নিষ্পত্তি করার ফলে নিরাপত্তার দিক দিয়েও ভারত সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে। তবে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত ও বাংলাদেশের গভীর সম্পর্কের মধ্যে এক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
গত সপ্তাহে ভারতীয় সংবাদসংস্থা পিটিআইকে সাক্ষাৎকার দেন ড. ইউনূস। সাক্ষাৎকারে তিনি দিল্লিতে থাকাকালীন সময় হাসিনাকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত রাখতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য চাপ বাড়ছে।
ওই সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে আমাদের এক সঙ্গে কাজ করা উচিত। যদিও এ সম্পর্ক বর্তমানে তলানিতে রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় সাক্ষাতকারে। যদিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূসের এমন মন্তব্যে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে তারা খুবই হতাশ হয়েছেন।
ভারতের সরকারি এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারত বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অপেক্ষা করছে তারা। এছাড়া নয়াদিল্লি এসব মন্তব্যের বিষয়গুলো নথিভুক্ত করছে। ভারতের সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, মেগাফোন কূটনীতির মাধ্যমে ড. ইউনূস দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো মিডিয়ার সামনে আনার মাধ্যমে ভারতকে চাপে রাখার চেষ্টা করছেন।
ঢাকা নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ভারতের নির্দেশনা রয়েছে। সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, কোন ভিত্তিতে ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে রয়েছে তা স্পষ্ট নয়।