সবার সংবাদ ডেস্ক :
মেহেরপুর শহরে অবস্থিত যে আবাসিক হোটেল এবং রেষ্টুরেন্টকে ঘিরে কানাঘুষার অন্ত ছিল না, যে হোটেলের আভ্যন্তরীণ কার্যক্রম নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ সহ অনেকেরই নজরদারী ছিল, অবশেষে সেই সমালোচিত আলোচিত হোটেল আটলান্টিকা’র মালিক ও তার সন্তান সহ এক নারীকে আটক করেছে মেহেরপুর সদর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ।
৩০ নভেম্বর দিবাগত রাত্রে পুলিশ মেহেরপুর এবং চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। পরে বুধবার বিকালে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে।
মেহেরপুর শহরের সরকারী কলেজ এবং ওয়াপদা মোড়ের মধ্যবর্তী স্থানে হোটেল আটলান্টিকা ভবনটি। এই ভবনটির মালিক ঢাকায় এবং কানাডায় বসবাসরত মেহেরপুরের কৃতি সন্তান প্রকৌশলী শহিদুল্লাহ’র। এর আগে এই ভবনে সেভ দ্যা চিলড্রেন এর হেড অফিস ছিল। সেভ দ্যা চিলড্রেন এর প্রকল্প মেয়াদ শেষ হলে তারা মেহেরপুর থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। তখন ভবনটি ফাঁকা হলে পুরো ভবনটি ভাড়া নেন হোটেল আটলান্টিকার মালিক। সংশ্লিষ্টরা জানান- প্রথমদিকে হোটেলটি সুনামের সাথে চলছিল। পরে লোকসান পুষিয়ে লাভজনক করতে তারা আভ্যন্তরীণ ডেকোরেশন বদলিয়ে অসামাজিক ব্যবসার পথ বেছে নেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ- সরকারী নিয়মনীতি ছাড়াই ভবনটিতে আবাসিক এবং রেস্টুরেন্ট কার্যক্রম চলছিল।
মূলত: রেস্টুরেন্ট ব্যবসার আড়ালে এখানে উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের সময় কাটানোর জন্য হোটেল অভ্যন্তরে গড়ে তোলা হয় ছোট ছোট কক্ষ। ঘন্টা চুক্তিতে ভাড়া দেয়া হতো সেই সমস্ত কক্ষ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অর্থাৎ টিউশনি থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ শেষ পর্যন্ত সময় একশ্রেণীর বখাটে ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা, কোচিং ফাঁকি দিয়ে এই হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়ে সময় কাটাতো। একপর্যায়ে হোটেলে সময় কাটানো ছেলেমেয়েদের একান্ত মুহুর্তগুলো গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে ফাঁদে ফেলে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হতো।
এই হোটেল কর্তৃপক্ষ খদ্দের সংগ্রহের জন্য কিছু বিপদগামী মেয়েদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। ওই সমস্ত মেয়েদের কাজ ছিল নারী নেটওয়ার্ট গড়ে তুলে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের হোটেল আটলান্টিকমুখী করা। এভাবেই প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী বেতন, ভবন ভাড়া সহ প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যায় বহন করে হোটেল পরিচালনা করে আসছিল।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান-অসামাজিক কার্যকলাপ ও প্রতারণামূলকভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগে মেহেরপুর শহরের বহুবির্তকিত হোটেল আটলান্টিকার মালিক সহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন- হোটেল আটলান্টিকার মালিক মতিয়ার রহমান ও তার ছেলে মামুন সহ ওই হোটেলের অসামাজিক কাজের সাথে যুক্ত ছন্দা খাতুন। বুধবার দিবাগত রাতে পুলিশ চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ আটককৃতদের আদালতে পাঠালে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আটক মতিয়ার রহমান (৫২), পিতাঃ কিয়াম উদ্দিন এবং তার সন্তান মামুন (২৮), শহরের ৯নং ওয়ার্ডে বসবাস করেন। এদিকে ছন্দা খাতুনকে আটক করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা থেকে। তার বাড়ি মেহেরপুরের আমঝুপিতে। এর আগে (২৩ নভেম্বর) পুলিশ মেহেরপুর শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে নাজনীন খান প্রিয়া, বিলকিস রাবেয়া টুম্পা এবং রুমানা ইয়াসমীন রুমা নামের আরও তিন নারী বøাকমেইলারকে আটক করেছে।