সবার সংবাদ ডেস্ক :
সারাদেশের মত মেহেরপুরেও জেলা পুলিশের উদ্যোগে "কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মূলমন্ত্র, শান্তি-শৃঙ্খলা সর্বত্র" এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে এবারের কমিউনিটি পুলিশং-ডে দিবস পালন করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় মেহেরপুর পুলিশ সুপার রাফিউল আলম এর নেতৃত্বে এই উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।
র্যালী শেষে এক সুধীজন সভায় মেহেরপুর পুলিশ সুপার রাফিউল আলম আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন- সমাজে নানা অসঙ্গতি থেকেই আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটনা এবং আইনকে হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পারিবারিক শিক্ষা ও শৃঙ্খলা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন- আত্মহত্যা কোন ধর্মই গ্রহণ করে না। অথচ-মেহেরপুর সহ এই অঞ্চলে আত্মহত্যা প্রবণতা খুবই বেশি। স্কুলপড়ুয়া থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত বয়সীরা এই জেলায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কেউ প্রেমে ব্যার্থ হয়ে কিংবা মোবাইল আসক্ত হয়ে আবার কেউ পারিবারে মূল্যহীন হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করছে। এই প্রবণতা মোকাবিলায় পারিবারিক শিক্ষা এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্টা খুবই জরুরী। তিনি বলেন- আগে মুরব্বীরা সমাজে সম্মানিত ছিলেন। সকলে তাদেরকে মান্য করতেন। কারণ তারা সমাজে পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ মানুষ। এই সমস্ত অভিজ্ঞজনেরা সমাজে মূল্যায়িত হলে সমাজে অনিয়ম, অনাচার, দুর্বৃত্তায়ন কমে যাবে। সমাজে শিষ্টাচার শৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে।
মেহেরপুর সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ শফিউল ইসলাম সরদার বলেন- পুলিশের সংখ্যানুপাতে সমাজের বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে এককভাবে পুলিশের মোকাবিলা করা সম্ভব না। তাই কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্ম। অনুষ্টানে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি শিক্ষাবিদ প্রফেসর হাসানুজ্জামান মালেক বলেন- সমাজে যে কোন অপরাধ পুলিশ এবং জনগণ যৌথভাবে মোকাবিলার জন্য কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা। ১৯৭২ সালের ২০ মে বঙ্গবন্ধুর এই কনসেপ্ট আজ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে এ ব্যবস্থা চালু আছে। মনে রাখতে হবে পুলিশ বাহিনীকে পিছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না। দেশে আজ ১ হাজার মানুষের জন্য একজন পুলিশ। তাই পুলিশকে সাহায্য করতে কমিউনিটি পুলিশিং কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।
মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটার অ্যাড. পল্লব ভট্টাচার্য বলেন- মেহেরপুর পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে মেহেরপুর পুলিশ বিভিন্ন মামলা এবং তদন্ত যেভাবে সুচারুরূপে সম্পন্ন করছে তা নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়। বিচারিক আদালতের একজন আইন কর্মকর্তা হিসাবে আমি মেহেরপুর পলিশকে এজন্য ধন্যবাদ জানায়। ভিশন-২০৪১ এর লক্ষ্য বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা অন্যতম। এক্ষেত্রে সমাজে আস্ফালনকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান তিনি।
মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইনজীবি আব্দু সালাম বলেন- বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী আজ জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ, অপরাজনীতি, মাদকাসক্তদের শিকার। তারপরও এই পুলিশ দেশের আইনশৃঙ্খলা ও মানুষের জানমাল রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করছে। তিনি সমাজের সমস্ত বেআইনী কাজের বিরুদ্ধে পুলিশের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের আরও গঠনমূলক ভূমিকা রাখার জন্য আহবান জানান।
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুজ্জামান ভুঁইয়া, জেলা পুলিশিং কমিটির সভাপতি ডা. আবুল বাশার, সাধারণ সম্পাদক আশকার আলী, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস। অনুষ্টানে মেহেরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার অপু সারোয়ার সহ তিন থানার উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ, মেম্বার ছাড়াও পুলিশিং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।